আজ মঙ্গলবার, ৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আইভীকে পাশে চান

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

উপ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই বিপক্ষের অনেককে ম্যানেজ করে ফেলেছিলেন সেলিম ওসমান। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের আগ পর্যন্ত বেকায়দায় থাকলেও পরে উৎড়ে গেছেন। নিজের দলতো বটেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপির একটা অংশের সাথে তার সখ্য বেশ। কতিপয় ব্যবসায়ী নেতাও তার কথায় উঠবস করে। তবে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে কব্জা করতে পারেননি এ ধর্নাঢ্য সাংসদ।
২০১৪ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে এমপি হন সেলিম ওসমান। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপির অনেক নেতা তার সাথে আঁতাত করে। বিএনপি ম্যানেজের এ দায়িত্ব পালন করেন ফতুল্লার আলোচিত এক শিল্পপতি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে প্রথমে বেকায়দায় ছিলেন সেলিম ওসমান। ওই আসনে লাঙ্গলের চরম বিরোধিতা করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। তাদের দাবি ছিলো, অনেক দিন ধরে শহর-বন্দরের এ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি নেই। ‘৯৬ তে এসএম আকরামের পর প্রথমে বিএনপি পরে জাতীয় পার্টির সাংসদ ছিলেন। এর আগে ‘৯১, তারও আগে ‘৮৬, ‘৮৮, ‘৭৯ তেও এখানে নৌকার এমপি ছিলো না। মোদ্দা কথায়, দেশ স্বাধীনের পর এগারটি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে মাত্র দুইবার এ আসনটি পেয়েছে আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে মহানগর, জেলা ও বন্দরের অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর প্রত্যাশা ছিলো এ আসনে যেন জাতীয় পার্টিকে ছাড় না দেয়া হয়। এ বিষয়ে খুব চিন্তায় ছিলেন সেলিম ওসমান। তিনি কৌশলী হয়ে প্রথমে চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে। তবে তা নাকচ হয়ে যায়। এদিকে জাতীয় পার্টিতে মনোনয়ন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েন। তার ভাবী ও সাবেক সাংসদ নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান পার্টির কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নির্দেশ তিনি মাঠেও নেমেছিলেন। তবে শেষতক অজানা যাদুর চেরাগের বদৌলতে মনোনয়ন পান সেলিম ওসমান।
গত ৬ বছরে সেলিম ওসমান অনেককে নিজের বলয়ে নিয়েছেন। এরমধ্যে তার আসনে থাকা বিএনপি নেতা ও জনপ্রতিধি রয়েছেন। বাংলাদেশ ইয়ার্ণ মার্চেন্ট, বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসেসিয়েশন, চেম্বার্স অব কমার্স, রাইফেল ক্লাব সহ বিভিন্ন সংগঠনেও প্রভাব রয়েছে তার। তিনি নিজেও বিকেএমইএ’র ৫ বারের প্রেসিডেন্ট। জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি এবং তার অনুগতরা অধিকাংশই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। তার বলয়ের লোক হলে যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক পদ পেয়ে যায়। আর পদ পেতে অনেকে অনিচ্ছাসত্তেও তার অনুগত হয়। তবে একটি জায়গায় এখনও জয়ী হতে পারেননি প্রভাবশালী এ সাংসদ ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য।
নানাভাবে চেষ্টা করেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বাগে আনতে পারেননি তিনি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর উন্নয়ন ও পানি বিশুদ্ধ করতে একটি আলোচনা সভায়ও এ চেষ্টা চালিয়েছেন এ সাংসদ। মেয়রের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে যেকোন ধরনের সমস্যায় আমি সিটি করপোরশেনকে আলোচনায় বসে সমাধানের জন্য আহবান করছি। যেকোন ধরনের সমস্যাই আলোচনায় বসে সমাধান করা সম্ভব। এর আগে তাকে দেয়া একটি চেম্বার্স অব কমার্স এর সংবর্ধনা সভায় সেলিম ওসমান বলেছিলেন, এখানে অনেক কাউন্সিলর আছেন। আপনারা তাকে (মেয়র আইভী) বুঝান। যদি তিনি না বুঝেন তবে আগামীতে আমি ওই চেয়ারে বসবো। এরও আগে শহরের নিতাইগঞ্জ ট্রাক স্ট্যান্ড সরানো নিয়েও মেয়র আইভীকে তার পাশে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এ সাংসদ। তবে নানাদিক চিন্তা করে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নাসিক মেয়র আইভী সেদিকে যাবেন না বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, ক্লীন ইমেজের রাজনীতিক ও উন্নয়নের জন্য আইভীর সুনাম রয়েছে। তার পাশে রয়েছেন সাধারণ জনতা সেই সাথে সুশীল সমাজ। যারা সুন্দর নারায়ণগঞ্জের জন্য লড়াই করেন, করছেন।